সৌদি রাজপরিবারের হালচাল : পরিস্থিতি শান্ত হলেও স্বস্তিকর নয়
আল জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স
আরব বিশ্বজুড়ে গণআন্দোলনের উত্তাল ঢেউ বইছে। সে সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব দুটি বিপরীতমুখী সঙ্কটের আবর্তে পড়েছে। একদিকে দেশটির যুবসমাজের জন্য আরও অধিক কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে পরবর্তী বাদশাহ কে হবেন তা নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা চলছে তখনই দেশটির অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হচ্ছে। বিশ্বের তেল ভাণ্ডারের এক-পঞ্চমাংশ রয়েছে সৌদি আরবে। তাই দেশটির স্থিতিশীলতা বজায় থাকা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের হাতে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণ ডলার। আরব বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টক মার্কেট রয়েছে সৌদি আরবে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন নীতির ক্ষেত্রে সৌদি ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ৮৮ বছর বয়সী সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ কর্মসংস্থানের জন্য ১৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থের একটি প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন। সৌদি আরবের অবকাঠামো উন্নয়ন, গৃহায়ন এবং নিরাপত্তাসহ অন্যান্য খাতে এ কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এভাবেই গণআন্দোলন থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেছে সৌদি রাজতন্ত্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে নানামুখী আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতি আপাতত শান্ত মনে হলেও স্বস্তিকর নয় বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। উদারবাদী, শিয়া মুসলমানসহ নানা সংগঠন আরও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দাবি করছে। মহিলাদের গাড়ি চালানোর ওপর একমাত্র সৌদি আরবেই নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু সৌদি আরবের অনেক মহিলাই এখন সে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দলবদ্ধ প্রতিবাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল গত ১১ মার্চ। কিন্তু কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় রিয়াদে সে আহ্বান তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। আল সৌদ বংশ গত ৭৯ বছর ধরে একনাগাড়ে সৌদি আরব শাসন করছে। যে পবিত্র ভূমিতে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন, এ শাসকবর্গ তার নাম রেখেছে নিজ বংশের নামে সৌদি আরব। যা অনেক মুসলমানের কাছে বেদনার কারণ হয়ে আছে। আর এ বংশকে শাসন পরিচালনায় সহায়তা করছে ওহাবী আলেম সমাজ। সৌদি আরবের বহু সংস্কার কর্মসূচিই পছন্দ করছেন না এসব উগ্রপন্থী প্রভাবশালী অনেক আলেম। চিকিত্সা শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে স্বদেশে ফিরে এসেছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। বিদেশে চিকিত্সাধীন থাকার সময় তার দু’দফা অপারেশন হয়েছে। বাদশাহর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ সুলতানের বয়সের পার্থক্য খুবই কম। এছাড়া যুবরাজের স্বাস্থ্য তেমন ভালো যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত সৌদি সিংহাসনে হয়তো বসবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স নায়েফ। স্বভাবে রক্ষণশীল হওয়ায় তিনি হয়তো বাদশাহ আবদুল্লাহর অনেক সংস্কার কর্মসূচি বন্ধ করে দেবেন বলে আশঙ্কা অনেকের। ৭০ বছর বয়সী নায়েফ ক্ষমতার পাদপ্রদীপে আসেন ২০০৯ সালে। সে সময় তাকে সৌদি আরবের দ্বিতীয় উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সৌদি রাজবংশের উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রণে আল সৌদ বংশের পুত্র-প্রপৌত্রদের একটি পরিষদ গঠন করেছিলেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। অবশ্য এ পরিষদ ঠিক কবে এবং কীভাবে কাজ শুরু করবে তা এখনও পরিষ্কার হয়ে ওঠেনি। সৌদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের ছেলেরা এ পর্যন্ত দেশটির সিংহাসনে আরোহণ করেছেন। সৌদের আরও বিশের অধিক ছেলে রয়েছেন যারা এখনও সিংহাসনে আরোহণ করেননি। এদের কারও বয়স ৭০ বা ৮০’র কম নয়। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন সৌদি নেতারা।
গত জুলাইয়ে বাদশাহ আবদুল্লাহ তার ছেলে আবদুল আজিজকে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। তাতে সৌদি পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বর্তমান রাজার হাত শক্তিশালী হয়। কিন্তু এতে অন্য প্রিন্সদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
এছাড়া আবদুল আজিজের আর যেসব নাতি ভালো অবস্থান করে নিতে পেরেছেন তার মধ্যে প্রিন্স নায়েবের ছেলে মোহাম্মদের নাম উল্লেখ করা যায়। সৌদি আরবের সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগের প্রধান মোহাম্মাদ। ২০০৯ সালে তাকে হত্যার জন্য আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছিল। এছাড়া সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন যুবরাজ সুলতানের ছেলে খালেদ।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা বা প্রভাব নিয়ে চিন্তিত সৌদি আরব। এ কারণে বাহরাইনের গণআন্দোলন দমনে সেনা পাঠিয়েছে সৌদি সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ এ পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি সৌদি আরবের ভেতরেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে।
অন্যদিকে সৌদি আরবে আল কায়দার তত্পরতা রয়েছে বলে দাবি করছে সৌদি সরকার। বিদেশি বিশেষ করে মার্কিন সহায়তায় ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ ধরনের তত্পরতার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়েছে সৌদি আরব। ফলে আল কায়দার তত্পরতা স্তিমিত হয়ে গেছে বলে আপাতত মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবে আল কায়দার তত্পরতার সঙ্গে কারা জড়িত ছিল তা পরিষ্কার করে আজও জানানো হয়নি। সবমিলিয়ে সৌদি আরবের বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও তাকে অনেক বিশ্লেষক স্বস্তিকর বলে মনে করতে পারছেন না।
আল জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স
আরব বিশ্বজুড়ে গণআন্দোলনের উত্তাল ঢেউ বইছে। সে সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব দুটি বিপরীতমুখী সঙ্কটের আবর্তে পড়েছে। একদিকে দেশটির যুবসমাজের জন্য আরও অধিক কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে পরবর্তী বাদশাহ কে হবেন তা নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা চলছে তখনই দেশটির অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হচ্ছে। বিশ্বের তেল ভাণ্ডারের এক-পঞ্চমাংশ রয়েছে সৌদি আরবে। তাই দেশটির স্থিতিশীলতা বজায় থাকা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের হাতে রয়েছে ব্যাপক পরিমাণ ডলার। আরব বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টক মার্কেট রয়েছে সৌদি আরবে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন নীতির ক্ষেত্রে সৌদি ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ৮৮ বছর বয়সী সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ কর্মসংস্থানের জন্য ১৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থের একটি প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন। সৌদি আরবের অবকাঠামো উন্নয়ন, গৃহায়ন এবং নিরাপত্তাসহ অন্যান্য খাতে এ কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এভাবেই গণআন্দোলন থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেছে সৌদি রাজতন্ত্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে নানামুখী আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতি আপাতত শান্ত মনে হলেও স্বস্তিকর নয় বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। উদারবাদী, শিয়া মুসলমানসহ নানা সংগঠন আরও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দাবি করছে। মহিলাদের গাড়ি চালানোর ওপর একমাত্র সৌদি আরবেই নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু সৌদি আরবের অনেক মহিলাই এখন সে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দলবদ্ধ প্রতিবাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল গত ১১ মার্চ। কিন্তু কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় রিয়াদে সে আহ্বান তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। আল সৌদ বংশ গত ৭৯ বছর ধরে একনাগাড়ে সৌদি আরব শাসন করছে। যে পবিত্র ভূমিতে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন, এ শাসকবর্গ তার নাম রেখেছে নিজ বংশের নামে সৌদি আরব। যা অনেক মুসলমানের কাছে বেদনার কারণ হয়ে আছে। আর এ বংশকে শাসন পরিচালনায় সহায়তা করছে ওহাবী আলেম সমাজ। সৌদি আরবের বহু সংস্কার কর্মসূচিই পছন্দ করছেন না এসব উগ্রপন্থী প্রভাবশালী অনেক আলেম। চিকিত্সা শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে স্বদেশে ফিরে এসেছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। বিদেশে চিকিত্সাধীন থাকার সময় তার দু’দফা অপারেশন হয়েছে। বাদশাহর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ সুলতানের বয়সের পার্থক্য খুবই কম। এছাড়া যুবরাজের স্বাস্থ্য তেমন ভালো যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত সৌদি সিংহাসনে হয়তো বসবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স নায়েফ। স্বভাবে রক্ষণশীল হওয়ায় তিনি হয়তো বাদশাহ আবদুল্লাহর অনেক সংস্কার কর্মসূচি বন্ধ করে দেবেন বলে আশঙ্কা অনেকের। ৭০ বছর বয়সী নায়েফ ক্ষমতার পাদপ্রদীপে আসেন ২০০৯ সালে। সে সময় তাকে সৌদি আরবের দ্বিতীয় উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সৌদি রাজবংশের উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রণে আল সৌদ বংশের পুত্র-প্রপৌত্রদের একটি পরিষদ গঠন করেছিলেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। অবশ্য এ পরিষদ ঠিক কবে এবং কীভাবে কাজ শুরু করবে তা এখনও পরিষ্কার হয়ে ওঠেনি। সৌদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের ছেলেরা এ পর্যন্ত দেশটির সিংহাসনে আরোহণ করেছেন। সৌদের আরও বিশের অধিক ছেলে রয়েছেন যারা এখনও সিংহাসনে আরোহণ করেননি। এদের কারও বয়স ৭০ বা ৮০’র কম নয়। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন সৌদি নেতারা।
গত জুলাইয়ে বাদশাহ আবদুল্লাহ তার ছেলে আবদুল আজিজকে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। তাতে সৌদি পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বর্তমান রাজার হাত শক্তিশালী হয়। কিন্তু এতে অন্য প্রিন্সদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
এছাড়া আবদুল আজিজের আর যেসব নাতি ভালো অবস্থান করে নিতে পেরেছেন তার মধ্যে প্রিন্স নায়েবের ছেলে মোহাম্মদের নাম উল্লেখ করা যায়। সৌদি আরবের সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগের প্রধান মোহাম্মাদ। ২০০৯ সালে তাকে হত্যার জন্য আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছিল। এছাড়া সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন যুবরাজ সুলতানের ছেলে খালেদ।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা বা প্রভাব নিয়ে চিন্তিত সৌদি আরব। এ কারণে বাহরাইনের গণআন্দোলন দমনে সেনা পাঠিয়েছে সৌদি সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ এ পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি। এমনকি সৌদি আরবের ভেতরেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে।
অন্যদিকে সৌদি আরবে আল কায়দার তত্পরতা রয়েছে বলে দাবি করছে সৌদি সরকার। বিদেশি বিশেষ করে মার্কিন সহায়তায় ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ ধরনের তত্পরতার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়েছে সৌদি আরব। ফলে আল কায়দার তত্পরতা স্তিমিত হয়ে গেছে বলে আপাতত মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবে আল কায়দার তত্পরতার সঙ্গে কারা জড়িত ছিল তা পরিষ্কার করে আজও জানানো হয়নি। সবমিলিয়ে সৌদি আরবের বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও তাকে অনেক বিশ্লেষক স্বস্তিকর বলে মনে করতে পারছেন না।