পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ফযিলত"
আবু হুরায়রা(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি রাসূল(সাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ "তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের/বাড়ির সামনে দিয়ে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবাগণ বললেন, তার শরীরে কোন ময়লাই বাকী থাকতে পারেনা। তিনি বললেন, এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ক্ষেত্রেও। এভাবে নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ নামাযীর যাবতীয় পাপ মোচন করে দেন"। ***বুখারী; মুসলিম।
প্রশ্নঃ পুরুষ এবং মহিলারা যখন সলাত আদায় করে তখন আলাদা নিয়মে কেন আদায় করে?
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েকঃ
বাজারে অনেক বই পাবেন যেখানে সলাত আদায়ের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন দেয়া আছে। বেশির ভাগ বইয়ে আলাদা একটা অধ্যায় থাকে যে, মহিলারা কিভাবে সলাত আদায় করব... ে এবং পুরুষরা কিভাবে সলাত আদায় করবে। আর সেখানে নিয়মগুলো আলাদা। সত্যি বলতে এমন কোনো সহীহ হাদীস খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেটা বলছে মহিলারা সালাত আদায় করবে পুরুষদের থেকে ভিন্ন নিয়মে।
আর আপনি যদি সহীহ বুখারী পড়েন এটা ১ম খন্ডে পাবেন, উম্মে দারদা (রা) তাশাহুদে বসেছিলেন পুরুষদের মতো করে। আর তিনি এমন একজন ছিলেন যিনি ধর্মীয় বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন, এরকম আরো অনেক সহীহ হাদীস আছে যেগুলোর বর্ণনা দিয়েছিলেন আইশাহ (রা) ও নাবী (স) এর অন্যান্য স্ত্রীরা আর অন্য মহিলা সাহাবীরা। আল্লাহ্ তাদের শান্তিতে রাখুন।
তবে তাদের কেউ বলেন নি পুরুষ এবং মহিলাদের সলাত আদায় করার নিয়ম একবারে আলাদা। নাবী করীম (স) বলেছেন ইবাদত করো সেভাবে যেভাবে আমাকে ইবাদত করতে দেখো।
তাহলে পুরুষ এবং মহিলারা সালাত আদায় করবে একই রকম নিয়মে। আশাকরি উত্তরটা পেয়েছেন।
হে ঈমানদারগণ !
তোমরা ধৈর্য ও নামযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্যই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথী।
নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন-প্রাণ ও ফল-ফসলে ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব।
আর তুমি ধৈর্যশীলদের শুভসংবাদ দাও; যারা তাদের উপর কোন বিপদ এলে বলে, [ ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রজি'উন ] আমরা তো আল্লাহ্রই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করব। এই সকল লোকদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আশিস ও করুনা বর্ষিত হয়, আর এরাই হল সৎপথপ্রাপ্ত।
আল-বাক্বারাহ, আয়াত ১৫৫-১৫৭
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েকঃ
বাজারে অনেক বই পাবেন যেখানে সলাত আদায়ের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন দেয়া আছে। বেশির ভাগ বইয়ে আলাদা একটা অধ্যায় থাকে যে, মহিলারা কিভাবে সলাত আদায় করব... ে এবং পুরুষরা কিভাবে সলাত আদায় করবে। আর সেখানে নিয়মগুলো আলাদা। সত্যি বলতে এমন কোনো সহীহ হাদীস খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেটা বলছে মহিলারা সালাত আদায় করবে পুরুষদের থেকে ভিন্ন নিয়মে।
আর আপনি যদি সহীহ বুখারী পড়েন এটা ১ম খন্ডে পাবেন, উম্মে দারদা (রা) তাশাহুদে বসেছিলেন পুরুষদের মতো করে। আর তিনি এমন একজন ছিলেন যিনি ধর্মীয় বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন, এরকম আরো অনেক সহীহ হাদীস আছে যেগুলোর বর্ণনা দিয়েছিলেন আইশাহ (রা) ও নাবী (স) এর অন্যান্য স্ত্রীরা আর অন্য মহিলা সাহাবীরা। আল্লাহ্ তাদের শান্তিতে রাখুন।
তবে তাদের কেউ বলেন নি পুরুষ এবং মহিলাদের সলাত আদায় করার নিয়ম একবারে আলাদা। নাবী করীম (স) বলেছেন ইবাদত করো সেভাবে যেভাবে আমাকে ইবাদত করতে দেখো।
তাহলে পুরুষ এবং মহিলারা সালাত আদায় করবে একই রকম নিয়মে। আশাকরি উত্তরটা পেয়েছেন।
হে ঈমানদারগণ !
তোমরা ধৈর্য ও নামযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্যই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথী।
নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন-প্রাণ ও ফল-ফসলে ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব।
আর তুমি ধৈর্যশীলদের শুভসংবাদ দাও; যারা তাদের উপর কোন বিপদ এলে বলে, [ ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রজি'উন ] আমরা তো আল্লাহ্রই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করব। এই সকল লোকদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আশিস ও করুনা বর্ষিত হয়, আর এরাই হল সৎপথপ্রাপ্ত।
আল-বাক্বারাহ, আয়াত ১৫৫-১৫৭
সলাতের [জামা’আতের] দিকে দৌড়ে আসবে না, বরং শান্তি ও ধীরস্থিরভাবে আসবেঃ
আবূ কাতাদাহ (রা) বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী (স) এর সঙ্গে সলাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ তিনি লোকদের [আগমনের] আওয়ায শুনতে পেলেন।
সলাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কি হয়েছিল? তাঁরা বললেন, আমরা সলাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম।
নাবী (স) বললেন, এরূপ করবে না। যখন সলাতে আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে [ইমামের সাথে] যতটূকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যায় তা [ইমামের সালাম ফিরানোর পর] পূর্ণ করবে।
সহীহ আল বুখারী, হাদীস ৬৩৫
আবূ কাতাদাহ (রা) বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী (স) এর সঙ্গে সলাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ তিনি লোকদের [আগমনের] আওয়ায শুনতে পেলেন।
সলাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কি হয়েছিল? তাঁরা বললেন, আমরা সলাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম।
নাবী (স) বললেন, এরূপ করবে না। যখন সলাতে আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে [ইমামের সাথে] যতটূকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যায় তা [ইমামের সালাম ফিরানোর পর] পূর্ণ করবে।
সহীহ আল বুখারী, হাদীস ৬৩৫
আসসালামুয়ালাইকুম ......
আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে সালাতের আদেশ দিন এবং নিজেও এর উপর অবিচল থাকুন।"
সুরা তোয়া-হা, আয়াত ১৩২।
---তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছ... েন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে 'উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। [বনী-ইসরাইলঃ ২৩]
আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোথায় যাবে ? আমাদের বাপ মা কি শিক্ষা দিতেছে আমাদের ? (১) এই যুগের ছেলে মেয়ে বলতে পারে না সুরা ফাতিহা কোনটা ... অথচ আলহামদুলিল্লাহ সুরা ঠিকি পারে ... (২) আমাদের ৪ টা আসমানি কিতাবের নাম জানে না ... অথচ হুমায়ন আজাদ কি কি চটি বই লিখছে তা ঠিকি জানে ... (৩) আমাদের রাসুল (সঃ) সম্পূর্ণ নাম কি তা জানে না ... অথচ ডালিউড , বলিউড বাদ দেই , হলিউডের নায়ক নায়িকার নাম কি , কি খায় , কোই ঘুমায় তা খুবি ভালো জানে ... (৪) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় জানে না ... অথচ কোন চ্যানেলে কখন কোন সিরিয়াল হবে তা ঠিকি জানে ... (৫) মা ফাতেমা (রাঃ) কি ভাবে পর্দা করছে , কি জামা পড়ছে তা জানে না ... অথচ চিকনি চামেলি জামা , ন্যারো প্যান্ট আর পাগলু সার্ট ঠিকি চিনে ... (৬) শূকরের মাংস হারাম মানে ... অথচ সুদ কে হালাল বানিয়ে ছারে ... (৭) রাসুল (সঃ) কি ভাবে , আর কি কি খাবার খাইছে তা জানে না ... অথচ চাইনিজে গিয়ে ছুরি আর কাটা চামচ দিয়ে কি ভাবে খেতে হয় তা আমাদের সবার জানা ... (৮) সন্তানকে ছোট বেলা থেকেই দাড়ি টুপি ওয়ালাদের দেখিয়ে শিক্ষা দেই এরা মৌলবাদী এদের থেকে দুরে থাকবা ... অথচ মরার ডাক আসলে ঐ দাড়ি টুপি মৌলবাদী দিয়েই দোয়া কালাম পড়ানোর জন্য খোজ করি ... (৯) কোরআন , হাদিসের কিতাব গুলো মাসে একবারও ধরে দেখি না ... অথচ অলস সময় ভালো কোন লেখকের বই পড়ে পাস করি ... এমন আরও হাজারও কারন দেখানো যায় ... আর এই সব কিছুই আমরা মা বাবা থেকে পাই ... যদি বাবা মা ছোট বেলায় ভূত পেতনি অথবা রাজা রানীর গল্প না বলে ইসলামের বড় বড় বীর শহীদ আর গাজীদের গল্প শুনাইতেন তবে আমাদের মাঝে ইসলামের প্রতি অন্যরকম আগ্রহ জন্ম নিতো ... আমাদের দেশে আল্লাহর কোরআন হত আমাদের সংবিধান ।।
মহানবীর (সা.)মানবতাবোধ
ইকবাল কবীর মোহন
গোটা বিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে চলছে এখন নানা জল্পনা-কল্পনা। আধুনিক মানুষের কেউ কেউ দাবি করছেন, বর্তমান দুনিয়া শিক্ষা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাফল্যের চরম শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে একথা বলা হয়তো সঠিক যে, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান দুনিয়া শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি ও সফলতা লাভ করেছে। সভ্য ও সুশীল বলে দাবিদার এ সভ্যতার মানুষের একাংশ আবার কতটা নীচ ও বর্বর হতে পারে, তাও কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করছি। সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহ একটু গভীরভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করলে আমরা ব্যথিত না হয়ে পারি না। একদিকে চলছে মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে অবিশ্রান্ত প্রয়াস, আর তার পাশাপাশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে মানবতা দলনের ভয়ানক চিত্র। মানবিক মূল্যবোধ ও মানবতাকে ধ্বংস করার পশ্চিমা পরিকল্পনা ও মারণাস্ত্রের ঝলকানি আমাদের সব সুকোমল ভাবনা-চিন্তা ও সফলতাকে ম্লান করে দিচ্ছে। মানুষের মৌলিক অধিকারের নামে সারাক্ষণ যারা বক্তৃতার খই ফোটাচ্ছে, সেই পশ্চিমা শক্তি যখন গায়ের জোরে অন্যের দেশ ও সম্পদ দখলের প্রয়াস চালাচ্ছে তখন প্রশ্ন জাগে—আমরা এ কোন মানবতার কথা বলছি। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পতাকা উড়িয়ে পশ্চিমের দেশগুলো যখন আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, লেবানন, বসনিয়া, কাশ্মীর ও ইরাকসহ দুনিয়ার বিভিন্ন জনপদে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে, লুণ্ঠন চালায়, চালায় ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ—তখন প্রশ্ন জাগে, এরা কোন মানবতা ও গণতন্ত্রের কথা বলছে! সভ্যতার মুখোশধারী এই তথাকথিত দেশগুলো হচ্ছে আমেরিকা, ইসরাইল, ভারত ও ইউরোপভুক্ত বিভিন্ন দেশ। মানবতা ও সভ্যতার কথার আড়ালে তারা চালাচ্ছে অসভ্য আচরণ। বসনিয়ায় চার লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা, ফিলিস্তিনে ৫০ বছর ধরে অবিরামভাবে অগণিত মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়া, কাশ্মীর, চেচনিয়া, আলজেরিয়া ও অন্যান্য অনেক দেশে নিরপরাধ মুসলিম শিশু-মহিলা ও অসহায়-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা ও শোষণ আধুনিক সভ্যতার এক দুর্ভাগ্যজনক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সর্বত্র আজ প্রশ্ন উঠেছে সভ্যতা ও মানবাধিকার নিয়ে। পশ্চিমাদের এই বক্তৃতাসর্বস্ব মানবাধিকারের নাটক ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে চিন্তাশীল মানুষকে আজ ভাবিয়ে তুলছে। সত্যি কথা বলতে কী, প্রকৃত মানবাধিকার এখন কোথাও প্রতিষ্ঠিত নেই। ফলে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ আজ হাঁফিয়ে উঠেছে। তারা বর্তমান সভ্যতার পশুত্ব ও বর্বরতা থেকে মুক্তি পেতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে। কিন্তু শান্তির পথ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
অথচ ইসলামের নবী, মানবতার পরম বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়ার মানুষের জন্য পেশ করেছিলেন মানবতার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) মানুষ ও মানুষের কল্যাণ নিয়ে যে কতটা আন্তরিক ও পেরেশান ছিলেন, তা তাঁর কিশোর বয়সেও লক্ষ্য করা যায়। আরবের রক্তাক্ত ও খুনঝরা সমাজের অধোগতি মহানবীর (সা.) মনকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। তাই মানুষের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি গঠন করেন হিলফুল ফুজুল সংগঠন। ৫৯৫ সালে গঠিত এই সংগঠনের মূল কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ : ১. সবাই মিলে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। ২. অত্যাচারীর হাত থেকে নিরীহ ও মজলুম মানুষকে রক্ষা করা এবং জালিমদের দমন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা। ৩. দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে যথাসম্ভব সহায়তা করা। ৪. বিদেশি লোকদের জান-মাল ও মান-সম্মান রক্ষার চেষ্টা করা।
মহানবীর (সা.) এই কর্মসূচি দুনিয়ার ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। আজকের সভ্য দুনিয়ায় মানবতার কল্যাণ ও মানবাধিকারের বিকাশের জন্য বহু সংস্থা, এমনকি জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনও নিরন্তর কাজ করছে। প্রায়ই আমরা এসব সংস্থা বা সংগঠনের পক্ষে পক্ষপাতমূলক এবং একপেশে আচরণের অভিযোগ লক্ষ্য করি। অভিযোগ রয়েছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো সব সময় শক্তির পক্ষে কাজ করে এবং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা ছাড়া মানবতাকে আর কিছুই এই সংস্থা বা ফোরাম দিতে পারেনি। অথচ আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.) যে মানবিক তত্পরতা প্রদর্শন করছেন তার সামান্যতম আজ কোথাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বর্তমানে মানুষরূপী হায়েনারা দুনিয়ার দেশে দেশে অকাতরে মানুষ খুন করছে। আধুনিক মারণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর জন্য মানুষকে তার শিকারে পরিণত করছে। বিভিন্ন দেশ দখলের সময় মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে এরা মানুষকে ধরে পশুর মতো খুন করছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এরা নিরপরাধ শিশু-মহিলা ও পুরুষ যুদ্ধবন্দিদের পর্যন্ত নির্বিচারে হত্যা করছে। অথবা হাত-পা-চোখ বেঁধে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখছে, কিংবা লোহার ছোট খাঁচায় বন্দি করে অনাহারে দিনের পর দিন ফেলে রাখা হচ্ছে। এ ধরনের আচরণ আমরা লক্ষ্য করেছি বসনিয়ায়, প্রতিদিন লক্ষ্য করছি ফিলিস্তিনে। আফগানিস্তান, কাশ্মীর ও ইরাকেও আমরা একই চিত্র দেখতে পেয়েছি। মুসলিম দুনিয়ার যেখানেই খ্রিস্টান-ইহুদি লবির আগ্রাসন ও জবরদখল দেখা যায়, সেখানেই মানবতা ও মানবিকতার চরম লঙ্ঘন লক্ষ্য করা যায়। এদের পশুশক্তি গোটা দুনিয়ার মানবিকতা ও সততাকে পিষে মারছে।
অথচ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সামরিক অভিযানকালে নারী ও শিশুসহ যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে আচরণের যে নজির স্থাপন করেছেন, আজকের দুনিয়ায় তা সত্যিই বিরল। তিনি বলেছেন, ‘বন্দিদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করো।’ ইসলামের প্রথম জেহাদ বিজয়ের পর যেসব কাফের সেনা যুদ্ধবন্দি হয়েছিল তাদের প্রতি মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা যে অসাধারণ আচরণ করেছিলেন তা দুনিয়ার ইতিহাসে আর কোথাও দেখা যায়নি। সাহাবারা যুদ্ধ শেষ করে যখন মদিনায় ফিরে যাচ্ছিলেন তখন তারা পায়ে হেঁটে গেলেন আর বন্দিদের উটের পিঠে আরোহণ করিয়ে নিয়ে গেলেন। তারা বন্দিদের রুটি খেতে দিলেন আর নিজেরা খেলেন শুকনো খেজুর। মক্কা বিজয়ের পর মুসলিম শত্রু কাফেরদের জন্য মহানবী (সা.) যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন তার কথা বলতে গিয়ে আধুনিক দুনিয়ার খ্যাতনামা ঐতিহাসিক গিবন বলেছেন, In the long history of the world there is no instance of magnanimity and forgiveness which can approach those of Mohammad when all his enemies lay at his feet and he forgave them one and all. অর্থাত্ ‘মুহাম্মদ (সা.) তাঁর কাছে পদানত শত্রুকে ক্ষমা করে দিয়ে যে ঔদার্য ও ক্ষমাশীলতার বিরল আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, জগতের সুদীর্ঘ ইতিহাসে তার কোনো নজির নেই।’ মানবতা তথা মানুষের মর্যাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে মহানবীর (সা.) আরও একটি পদক্ষেপ হলো ছোট-বড় ভেদাভেদ সৃষ্টির মতো অমানবিকতার সব প্রাচীর ভেঙে ফেলা এবং মানুষে-মানুষে বিভেদ নয়, সমানাধিকারের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। তখনকার আরব সমাজে মানুষকে মানুষের দাস হয়ে থাকতে হতো। দাসদের না ছিল কোনো অধিকার, না কোনো স্বাধীনতা। মনিবের ইচ্ছার ওপরই তাকে বেঁচে থাকতে হতো। এই জঘন্য ও মানবতাবিরোধী প্রথাকে মুহাম্মদ (সা.) উচ্ছেদ করে দাসদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। অমানবিক এই দাস প্রথাকে বাতিল করার প্রক্রিয়া হিসেবে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘তোমাদের ভাইয়েরাই তো তোমাদের দাস। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তাই যার অধীনে দাস হিসেবে তার একটি ভাই আছে তার উচিত সে যা খাবে, তাকেও তা খেতে দেবে এবং সে যা পরিধান করবে, তাকেও তাই পরতে দেবে।’
শুধু কি তাই? মহানবী (সা.) দাসদের মর্যাদাকে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরও বললেন, ‘যোগ্যতার বলে কোনো দাস যদি নেতৃত্ব পায় তবে তাকেই তোমরা মান্য করবে।’ দাস বা অধীনস্তদের ওপর কোনো ধরনের জুলুমকে মহানবী (সা.) একটি ঘৃণিত কাজ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কারা নিকৃষ্ট বলে দেব? যারা একাকী খায়, দাসদের বেত মারে এবং কাউকেও কিছু দেয় না।’ তাছাড়া তিনি এক ঘোষণার মাধ্যমে দাসদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করাকে আখেরাতে ক্ষতির কারণ বলে বর্ণনা করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে দাসদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ আজকের দুনিয়ায় কোথায় আছে এই মানবতাবোধ, এই ভ্রাতৃত্ববোধ? মহানবীর (সা.) কাছে সব মানুষই ছিল সমান। তাঁর কাছে আপন-পর বলে কেউ ছিল না। তাই তো তিনি বলেছেন, ‘সব মুসলিম একে অপরের ভাই।’ আর এই ভাই-ভাই সম্পর্কের কথা আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালাও মহাগ্রন্থ আল কোরআনে সুন্দরভাবে ঘোষণা করেছেন এভাবে—‘অবশ্যই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর, যাতে তোমরা রহমত পেতে পার।’ মহানবী (সা.) তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে সব মানুষের সমান মর্যাদা ঘোষণা করে বৈষম্যের মূলোত্পাটন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র খোদাভীতি ছাড়া অনারবদের ওপর আরবদের আর আরবদের ওপর অনারবদের কোনো প্রাধান্য নেই।’ আজকের দুনিয়ায় অমানবিকতার অন্যতম বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে অসহায় ও নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন পরিচালনা এবং দুর্বল জাতিগুলোর ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা। আমেরিকাসহ পশ্চিমা জাতিগুলো তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য হাজার হাজার অসহায় মানুষকে পর্যন্ত নির্বিচারে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না। তারা মানুষের অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও দুর্বলতার সুযোগকে পুঁজি করে সেসব দেশের সম্পদ ও মাটি পর্যন্ত দখল করে নিতে পিছপা হয় না। সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ইরাকের তেলসম্পদ কব্জা করার জন্য আমেরিকা সেদেশের নিরস্ত্র ও নিরপরাধ অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে এবং সব রীতিনীতি ও আইন অমান্য করে দেশটি দখল করে নিয়েছে। এর আগে তারা দীর্ঘ অর্থনৈতিক অবরোধ চালিয়ে দেশটির প্রায় পনের লাখ নিরপরাধ মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্ষমতাদর্পী হায়েনারা মানবতা, মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার কথা মুখে বললেও মূলত নিজেদের স্বার্থে মানবতা লঙ্ঘনের যাবতীয় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ মহানবী (সা.) অসহায়, দুর্বল ও পীড়িত মানুষের অধিকার ছাড়া অন্য কিছুই কল্পনা করতে পারেননি। তিনি তাদের প্রতি সর্বদাই ছিলেন সদয় ও মহানুভব। তাই তো মহানবী (সা.) এ বিষয়ে কী সুন্দর কথাই না বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা পৃথিবীর অধিবাসীদের প্রতি সদয় হও, তাহলে ঊর্ধ্বলোকের প্রভুও তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ আজকের দুনিয়ায় আর্ত-পীড়িত ও অসহায় মানুষের প্রতি মানবতাবোধের যে অভাব তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। মানবতাবোধের সঙ্গে ন্যায়বিচার ও সাম্য-মৈত্রীর গভীর যোগসূত্র রয়েছে। ন্যায়নীতি না থাকলে সেখানে মানবতাবোধের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। এই ন্যায়বিচারের প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করে গেছেন মহানবী (সা.)। তাঁর ন্যায়বোধ শত্রুদের কাছে আজও বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে রয়েছে। মহানবী (সা.) তাঁর জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও নীতিবোধকে নিশ্চিত করে গেছেন। ফলে তিনি এমন এক সুন্দর মানবসমাজ উপহার দিতে পেরেছিলেন, যা এরপর দুনিয়ার মানুষ আর প্রত্যক্ষ করতে পারেনি।
মহানবী (সা.) তাঁর জীবনে সর্বদাই নারীদের অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন এবং তাদের অধিকারের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। মহানবী (সা.) মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার সংরক্ষণে যে সমতাপূর্ণ বিধান রেখে গেছেন তা আজও দুনিয়ার মানুষকে হতবাক করে। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নবীর মানবতাবোধ ও ন্যায়পূর্ণ আচরণ অবিশ্বাসী মনীষীদেরও আকৃষ্ট না করে পারেনি। তারা ইসলামের বিরোধিতা করেছেন ঠিকই, কিন্তু মহানবীর (সা.) আদর্শের প্রশংসা না করে পারেননি। অমুসলিম মনীষীরা অকপটে স্বীকার করেছেন মহানবী (সা.) ও তাঁর আদর্শের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। ফরাসি মনীষী আলফ্রেড দ্য লামার্টিন মহানবী (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, Philosopher, orator, apostle, legislator, warrior, conqurer of ideas, restorer of rational sogmas of a cult without images. The founder of twenty terrestrial empires and of one spiritual empire that is Mohammad. As regards all standards by which human greatness may be measured, we may well ask, is there any man greater than he? অর্থাত্ দার্শনিক, বাগ্মী, ধর্মপ্রবর্তক, আইনপ্রণেতা, মতবাদ বিজয়ী, ধর্মমতের এবং প্রতিমাবিহীন ও উপাসনা পদ্ধতির পুনঃস্থাপক, বিশটি পার্থিব সাম্রাজ্যের এবং একটি ধর্ম-সাম্রাজ্যের সংস্থাপক কর্তা মুহাম্মদ।
ক্রমেই আমাদের এই জগত ও সভ্যতা মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। দুনিয়াব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে হিড়িক শুরু হয়েছে তার মোকাবিলা করার মতো কোনো সমন্বিত আদর্শ কারও কাছেই যে নেই, তা এখন সত্য ও বাস্তব প্রমাণিত হয়েছে। ফলে গোটা দুনিয়ার মানুষের কাছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামের বাণী ও আদর্শ আকর্ষণীয় হয়ে ধরা দিয়েছে। পশ্চিমা জগত এবং খোদ আমেরিকা ও ইউরোপের মানুষ ইসলাম ও কোরআনের সংস্পর্শে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। আর এই স্রোতধারাকে স্তব্ধ করার জন্যই শুরু হয়েছে দমন, পীড়ন, আগ্রাসন। ইসলাম ও মুসলমানদের নিঃশেষ করে ফেলার লক্ষ্যে তাই শুরু করেছে ক্রুসেড। আর এজন্য তারা বেছে নিয়েছে অনৈতিকতা ও অমানবিকতার হিংস্র পথ। যদিও তাদের এই অমানবিকতা ও অসত্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বের মানুষ। আশা করা যায়, নিকট ভবিষ্যতে এই অমানবিকতার পরাজয় ঘটবে এবং বিজয় হবে মানবিকতার। আর মানবিকতার জয় মানেই ইসলামের জয়। তবে এই বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে মুসলমানদের আরও বেশি সাহসিকতা ও সহিষ্ণুতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের অবশ্যই মহানবী (সা.) প্রদর্শিত সুমহান আদর্শকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। মহান আল্লাহ মুসলিম মিল্লাতকে এই সহজ বাস্তবতা বোঝার এবং সে অনুযায়ী পথ চলার তৌফিক দিন।
লেখক : শিশুসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার ও ব্যাংকার
ইকবাল কবীর মোহন
গোটা বিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে চলছে এখন নানা জল্পনা-কল্পনা। আধুনিক মানুষের কেউ কেউ দাবি করছেন, বর্তমান দুনিয়া শিক্ষা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাফল্যের চরম শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে একথা বলা হয়তো সঠিক যে, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান দুনিয়া শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি ও সফলতা লাভ করেছে। সভ্য ও সুশীল বলে দাবিদার এ সভ্যতার মানুষের একাংশ আবার কতটা নীচ ও বর্বর হতে পারে, তাও কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করছি। সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহ একটু গভীরভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করলে আমরা ব্যথিত না হয়ে পারি না। একদিকে চলছে মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে অবিশ্রান্ত প্রয়াস, আর তার পাশাপাশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে মানবতা দলনের ভয়ানক চিত্র। মানবিক মূল্যবোধ ও মানবতাকে ধ্বংস করার পশ্চিমা পরিকল্পনা ও মারণাস্ত্রের ঝলকানি আমাদের সব সুকোমল ভাবনা-চিন্তা ও সফলতাকে ম্লান করে দিচ্ছে। মানুষের মৌলিক অধিকারের নামে সারাক্ষণ যারা বক্তৃতার খই ফোটাচ্ছে, সেই পশ্চিমা শক্তি যখন গায়ের জোরে অন্যের দেশ ও সম্পদ দখলের প্রয়াস চালাচ্ছে তখন প্রশ্ন জাগে—আমরা এ কোন মানবতার কথা বলছি। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পতাকা উড়িয়ে পশ্চিমের দেশগুলো যখন আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, লেবানন, বসনিয়া, কাশ্মীর ও ইরাকসহ দুনিয়ার বিভিন্ন জনপদে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে, লুণ্ঠন চালায়, চালায় ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ—তখন প্রশ্ন জাগে, এরা কোন মানবতা ও গণতন্ত্রের কথা বলছে! সভ্যতার মুখোশধারী এই তথাকথিত দেশগুলো হচ্ছে আমেরিকা, ইসরাইল, ভারত ও ইউরোপভুক্ত বিভিন্ন দেশ। মানবতা ও সভ্যতার কথার আড়ালে তারা চালাচ্ছে অসভ্য আচরণ। বসনিয়ায় চার লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা, ফিলিস্তিনে ৫০ বছর ধরে অবিরামভাবে অগণিত মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়া, কাশ্মীর, চেচনিয়া, আলজেরিয়া ও অন্যান্য অনেক দেশে নিরপরাধ মুসলিম শিশু-মহিলা ও অসহায়-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা ও শোষণ আধুনিক সভ্যতার এক দুর্ভাগ্যজনক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সর্বত্র আজ প্রশ্ন উঠেছে সভ্যতা ও মানবাধিকার নিয়ে। পশ্চিমাদের এই বক্তৃতাসর্বস্ব মানবাধিকারের নাটক ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে চিন্তাশীল মানুষকে আজ ভাবিয়ে তুলছে। সত্যি কথা বলতে কী, প্রকৃত মানবাধিকার এখন কোথাও প্রতিষ্ঠিত নেই। ফলে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ আজ হাঁফিয়ে উঠেছে। তারা বর্তমান সভ্যতার পশুত্ব ও বর্বরতা থেকে মুক্তি পেতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে। কিন্তু শান্তির পথ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
অথচ ইসলামের নবী, মানবতার পরম বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়ার মানুষের জন্য পেশ করেছিলেন মানবতার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) মানুষ ও মানুষের কল্যাণ নিয়ে যে কতটা আন্তরিক ও পেরেশান ছিলেন, তা তাঁর কিশোর বয়সেও লক্ষ্য করা যায়। আরবের রক্তাক্ত ও খুনঝরা সমাজের অধোগতি মহানবীর (সা.) মনকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। তাই মানুষের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি গঠন করেন হিলফুল ফুজুল সংগঠন। ৫৯৫ সালে গঠিত এই সংগঠনের মূল কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ : ১. সবাই মিলে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। ২. অত্যাচারীর হাত থেকে নিরীহ ও মজলুম মানুষকে রক্ষা করা এবং জালিমদের দমন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা। ৩. দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে যথাসম্ভব সহায়তা করা। ৪. বিদেশি লোকদের জান-মাল ও মান-সম্মান রক্ষার চেষ্টা করা।
মহানবীর (সা.) এই কর্মসূচি দুনিয়ার ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। আজকের সভ্য দুনিয়ায় মানবতার কল্যাণ ও মানবাধিকারের বিকাশের জন্য বহু সংস্থা, এমনকি জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনও নিরন্তর কাজ করছে। প্রায়ই আমরা এসব সংস্থা বা সংগঠনের পক্ষে পক্ষপাতমূলক এবং একপেশে আচরণের অভিযোগ লক্ষ্য করি। অভিযোগ রয়েছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো সব সময় শক্তির পক্ষে কাজ করে এবং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা ছাড়া মানবতাকে আর কিছুই এই সংস্থা বা ফোরাম দিতে পারেনি। অথচ আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.) যে মানবিক তত্পরতা প্রদর্শন করছেন তার সামান্যতম আজ কোথাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বর্তমানে মানুষরূপী হায়েনারা দুনিয়ার দেশে দেশে অকাতরে মানুষ খুন করছে। আধুনিক মারণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর জন্য মানুষকে তার শিকারে পরিণত করছে। বিভিন্ন দেশ দখলের সময় মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে এরা মানুষকে ধরে পশুর মতো খুন করছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এরা নিরপরাধ শিশু-মহিলা ও পুরুষ যুদ্ধবন্দিদের পর্যন্ত নির্বিচারে হত্যা করছে। অথবা হাত-পা-চোখ বেঁধে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখছে, কিংবা লোহার ছোট খাঁচায় বন্দি করে অনাহারে দিনের পর দিন ফেলে রাখা হচ্ছে। এ ধরনের আচরণ আমরা লক্ষ্য করেছি বসনিয়ায়, প্রতিদিন লক্ষ্য করছি ফিলিস্তিনে। আফগানিস্তান, কাশ্মীর ও ইরাকেও আমরা একই চিত্র দেখতে পেয়েছি। মুসলিম দুনিয়ার যেখানেই খ্রিস্টান-ইহুদি লবির আগ্রাসন ও জবরদখল দেখা যায়, সেখানেই মানবতা ও মানবিকতার চরম লঙ্ঘন লক্ষ্য করা যায়। এদের পশুশক্তি গোটা দুনিয়ার মানবিকতা ও সততাকে পিষে মারছে।
অথচ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সামরিক অভিযানকালে নারী ও শিশুসহ যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে আচরণের যে নজির স্থাপন করেছেন, আজকের দুনিয়ায় তা সত্যিই বিরল। তিনি বলেছেন, ‘বন্দিদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করো।’ ইসলামের প্রথম জেহাদ বিজয়ের পর যেসব কাফের সেনা যুদ্ধবন্দি হয়েছিল তাদের প্রতি মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা যে অসাধারণ আচরণ করেছিলেন তা দুনিয়ার ইতিহাসে আর কোথাও দেখা যায়নি। সাহাবারা যুদ্ধ শেষ করে যখন মদিনায় ফিরে যাচ্ছিলেন তখন তারা পায়ে হেঁটে গেলেন আর বন্দিদের উটের পিঠে আরোহণ করিয়ে নিয়ে গেলেন। তারা বন্দিদের রুটি খেতে দিলেন আর নিজেরা খেলেন শুকনো খেজুর। মক্কা বিজয়ের পর মুসলিম শত্রু কাফেরদের জন্য মহানবী (সা.) যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন তার কথা বলতে গিয়ে আধুনিক দুনিয়ার খ্যাতনামা ঐতিহাসিক গিবন বলেছেন, In the long history of the world there is no instance of magnanimity and forgiveness which can approach those of Mohammad when all his enemies lay at his feet and he forgave them one and all. অর্থাত্ ‘মুহাম্মদ (সা.) তাঁর কাছে পদানত শত্রুকে ক্ষমা করে দিয়ে যে ঔদার্য ও ক্ষমাশীলতার বিরল আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, জগতের সুদীর্ঘ ইতিহাসে তার কোনো নজির নেই।’ মানবতা তথা মানুষের মর্যাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে মহানবীর (সা.) আরও একটি পদক্ষেপ হলো ছোট-বড় ভেদাভেদ সৃষ্টির মতো অমানবিকতার সব প্রাচীর ভেঙে ফেলা এবং মানুষে-মানুষে বিভেদ নয়, সমানাধিকারের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। তখনকার আরব সমাজে মানুষকে মানুষের দাস হয়ে থাকতে হতো। দাসদের না ছিল কোনো অধিকার, না কোনো স্বাধীনতা। মনিবের ইচ্ছার ওপরই তাকে বেঁচে থাকতে হতো। এই জঘন্য ও মানবতাবিরোধী প্রথাকে মুহাম্মদ (সা.) উচ্ছেদ করে দাসদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। অমানবিক এই দাস প্রথাকে বাতিল করার প্রক্রিয়া হিসেবে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘তোমাদের ভাইয়েরাই তো তোমাদের দাস। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তাই যার অধীনে দাস হিসেবে তার একটি ভাই আছে তার উচিত সে যা খাবে, তাকেও তা খেতে দেবে এবং সে যা পরিধান করবে, তাকেও তাই পরতে দেবে।’
শুধু কি তাই? মহানবী (সা.) দাসদের মর্যাদাকে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরও বললেন, ‘যোগ্যতার বলে কোনো দাস যদি নেতৃত্ব পায় তবে তাকেই তোমরা মান্য করবে।’ দাস বা অধীনস্তদের ওপর কোনো ধরনের জুলুমকে মহানবী (সা.) একটি ঘৃণিত কাজ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কারা নিকৃষ্ট বলে দেব? যারা একাকী খায়, দাসদের বেত মারে এবং কাউকেও কিছু দেয় না।’ তাছাড়া তিনি এক ঘোষণার মাধ্যমে দাসদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করাকে আখেরাতে ক্ষতির কারণ বলে বর্ণনা করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে দাসদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ আজকের দুনিয়ায় কোথায় আছে এই মানবতাবোধ, এই ভ্রাতৃত্ববোধ? মহানবীর (সা.) কাছে সব মানুষই ছিল সমান। তাঁর কাছে আপন-পর বলে কেউ ছিল না। তাই তো তিনি বলেছেন, ‘সব মুসলিম একে অপরের ভাই।’ আর এই ভাই-ভাই সম্পর্কের কথা আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালাও মহাগ্রন্থ আল কোরআনে সুন্দরভাবে ঘোষণা করেছেন এভাবে—‘অবশ্যই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর, যাতে তোমরা রহমত পেতে পার।’ মহানবী (সা.) তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে সব মানুষের সমান মর্যাদা ঘোষণা করে বৈষম্যের মূলোত্পাটন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘একমাত্র খোদাভীতি ছাড়া অনারবদের ওপর আরবদের আর আরবদের ওপর অনারবদের কোনো প্রাধান্য নেই।’ আজকের দুনিয়ায় অমানবিকতার অন্যতম বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে অসহায় ও নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন পরিচালনা এবং দুর্বল জাতিগুলোর ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা। আমেরিকাসহ পশ্চিমা জাতিগুলো তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য হাজার হাজার অসহায় মানুষকে পর্যন্ত নির্বিচারে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না। তারা মানুষের অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও দুর্বলতার সুযোগকে পুঁজি করে সেসব দেশের সম্পদ ও মাটি পর্যন্ত দখল করে নিতে পিছপা হয় না। সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ইরাকের তেলসম্পদ কব্জা করার জন্য আমেরিকা সেদেশের নিরস্ত্র ও নিরপরাধ অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে এবং সব রীতিনীতি ও আইন অমান্য করে দেশটি দখল করে নিয়েছে। এর আগে তারা দীর্ঘ অর্থনৈতিক অবরোধ চালিয়ে দেশটির প্রায় পনের লাখ নিরপরাধ মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্ষমতাদর্পী হায়েনারা মানবতা, মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার কথা মুখে বললেও মূলত নিজেদের স্বার্থে মানবতা লঙ্ঘনের যাবতীয় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ মহানবী (সা.) অসহায়, দুর্বল ও পীড়িত মানুষের অধিকার ছাড়া অন্য কিছুই কল্পনা করতে পারেননি। তিনি তাদের প্রতি সর্বদাই ছিলেন সদয় ও মহানুভব। তাই তো মহানবী (সা.) এ বিষয়ে কী সুন্দর কথাই না বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা পৃথিবীর অধিবাসীদের প্রতি সদয় হও, তাহলে ঊর্ধ্বলোকের প্রভুও তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ আজকের দুনিয়ায় আর্ত-পীড়িত ও অসহায় মানুষের প্রতি মানবতাবোধের যে অভাব তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। মানবতাবোধের সঙ্গে ন্যায়বিচার ও সাম্য-মৈত্রীর গভীর যোগসূত্র রয়েছে। ন্যায়নীতি না থাকলে সেখানে মানবতাবোধের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। এই ন্যায়বিচারের প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করে গেছেন মহানবী (সা.)। তাঁর ন্যায়বোধ শত্রুদের কাছে আজও বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে রয়েছে। মহানবী (সা.) তাঁর জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও নীতিবোধকে নিশ্চিত করে গেছেন। ফলে তিনি এমন এক সুন্দর মানবসমাজ উপহার দিতে পেরেছিলেন, যা এরপর দুনিয়ার মানুষ আর প্রত্যক্ষ করতে পারেনি।
মহানবী (সা.) তাঁর জীবনে সর্বদাই নারীদের অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন এবং তাদের অধিকারের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। মহানবী (সা.) মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার সংরক্ষণে যে সমতাপূর্ণ বিধান রেখে গেছেন তা আজও দুনিয়ার মানুষকে হতবাক করে। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নবীর মানবতাবোধ ও ন্যায়পূর্ণ আচরণ অবিশ্বাসী মনীষীদেরও আকৃষ্ট না করে পারেনি। তারা ইসলামের বিরোধিতা করেছেন ঠিকই, কিন্তু মহানবীর (সা.) আদর্শের প্রশংসা না করে পারেননি। অমুসলিম মনীষীরা অকপটে স্বীকার করেছেন মহানবী (সা.) ও তাঁর আদর্শের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। ফরাসি মনীষী আলফ্রেড দ্য লামার্টিন মহানবী (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, Philosopher, orator, apostle, legislator, warrior, conqurer of ideas, restorer of rational sogmas of a cult without images. The founder of twenty terrestrial empires and of one spiritual empire that is Mohammad. As regards all standards by which human greatness may be measured, we may well ask, is there any man greater than he? অর্থাত্ দার্শনিক, বাগ্মী, ধর্মপ্রবর্তক, আইনপ্রণেতা, মতবাদ বিজয়ী, ধর্মমতের এবং প্রতিমাবিহীন ও উপাসনা পদ্ধতির পুনঃস্থাপক, বিশটি পার্থিব সাম্রাজ্যের এবং একটি ধর্ম-সাম্রাজ্যের সংস্থাপক কর্তা মুহাম্মদ।
ক্রমেই আমাদের এই জগত ও সভ্যতা মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। দুনিয়াব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে হিড়িক শুরু হয়েছে তার মোকাবিলা করার মতো কোনো সমন্বিত আদর্শ কারও কাছেই যে নেই, তা এখন সত্য ও বাস্তব প্রমাণিত হয়েছে। ফলে গোটা দুনিয়ার মানুষের কাছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামের বাণী ও আদর্শ আকর্ষণীয় হয়ে ধরা দিয়েছে। পশ্চিমা জগত এবং খোদ আমেরিকা ও ইউরোপের মানুষ ইসলাম ও কোরআনের সংস্পর্শে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। আর এই স্রোতধারাকে স্তব্ধ করার জন্যই শুরু হয়েছে দমন, পীড়ন, আগ্রাসন। ইসলাম ও মুসলমানদের নিঃশেষ করে ফেলার লক্ষ্যে তাই শুরু করেছে ক্রুসেড। আর এজন্য তারা বেছে নিয়েছে অনৈতিকতা ও অমানবিকতার হিংস্র পথ। যদিও তাদের এই অমানবিকতা ও অসত্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বের মানুষ। আশা করা যায়, নিকট ভবিষ্যতে এই অমানবিকতার পরাজয় ঘটবে এবং বিজয় হবে মানবিকতার। আর মানবিকতার জয় মানেই ইসলামের জয়। তবে এই বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে মুসলমানদের আরও বেশি সাহসিকতা ও সহিষ্ণুতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের অবশ্যই মহানবী (সা.) প্রদর্শিত সুমহান আদর্শকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। মহান আল্লাহ মুসলিম মিল্লাতকে এই সহজ বাস্তবতা বোঝার এবং সে অনুযায়ী পথ চলার তৌফিক দিন।
লেখক : শিশুসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার ও ব্যাংকার
বকো আর ঝকো, কানে দিয়েছি তুলো
আমি মোটামুটি ২২ বছর ধরে গদ্যকার্টুন লিখছি। একই কথা প্রতিবছর লিখি। নতুন কোনো কিছুই ঘটে না এই দেশে। সেই সরকারি দল আর বিরোধী দল। সেই হানাহানি, প্রতিহিংসা। সেই সরকারি দলের লোকদের ক্ষমতার দম্ভ। সেই বিরোধী দলের ‘দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে’ বলে হুংকার। সেই নির্বাচনের আগে গালভরা প্রতিশ্রুতি, ক্ষমতায় বসেই সবকিছু বেমালুম ভুলে যাওয়া। তাদের ভাব দেখে মনে হয়, প্রবাদই সত্য, মারো আর ধরো, পিঠে বেঁধেছি কুলো, বকো আর ঝকো, কানে দিয়েছি তুলো।
ঈদের ছবিও প্রতিবছর একই। রমজান মানে দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। বাসে-ট্রেনে ভিড়। নীরব চাঁদাবাজি। ঈদের আগের পত্রিকায় ট্রেনের ছাদে আর লঞ্চের ছাদে মানুষের ভিড়ের ছবি থাকবেই। লঞ্চের ছবিটা বুড়িগঙ্গার ওপরের কোনো সেতু থেকে তোলা হবে। ট্রেনের ছবিটা টঙ্গীর কাছ থেকে তুললে ভালো আসবে। ঈদের সময় ঢাকার ফাঁকা হয়ে যাওয়া। ঈদের আগের খবর, ছুটির ফাঁদে বাংলাদেশ। ঈদের পরের ছবি হলো, সরকারি অফিসের সারি সারি ফাঁকা টেবিল-চেয়ার। এর মধ্যে অনিবার্য থাকবে কয়েকটা সড়ক দুর্ঘটনা।
তবে এবার ঈদে একটা নতুন ঘটনা আছে। এবার ঈদ নাকি জনপদে জনপদে অন্যবারের তুলনায় ভিন্ন রকমভাবে পালিত হচ্ছে। কারণ, কোনো মন্ত্রী-এমপি নাকি এই ঈদে এলাকায় যাচ্ছেন না। কারণ, তাঁদের মুখ দেখানোর জো নেই। এটা বিরাট খবর। তার মানে তাঁদের লজ্জা-শরম আছে।
ধন্যবাদ সৈয়দ আবুল হোসেন আর শাজাহান খানকে। তাঁরা এবার খবরে বৈচিত্র্য এনে দিয়েছেন। রমজান মাসে মহাসড়কে খানাখন্দক সৃষ্টি করার অপূর্ব সাফল্য এবার সংবাদমাধ্যমকে খবর পরিবেশনে ভিন্নতা দিয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
সরকার অবশ্য সমালোচনা পছন্দ করে না। কোনো সরকারই করে না। তারা মনে করে, সমালোচনা সংবাদমাধ্যম পরিকল্পিতভাবে করছে, এটা করা হচ্ছে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং এই সব সমালোচনার কোনো ভিত্তিই নেই। এটা যে শুধু আমাদের দেশে হয়, তা নয়, সব দেশেই হয়—কোনো দেশের সরকারই সংবাদমাধ্যমকে পছন্দ করে না।
ঈদের আগের গদ্যকার্টুনে কৌতুক পরিবেশন না করে এসব কী লিখছি? আমার কোনো নতুন কৌতুক মনে পড়ছে না। একটা পুরোনো কৌতুকই বলি। একটা বাঘ ঘুমিয়ে ছিল। একটা বাঁদর তাই না দেখে তার স্বভাবসুলভ বাঁদরামি শুরু করে দিল। সে ঘুমন্ত বাঘের পিঠে উঠে বাঘের দুই কান মলে দিতে লাগল। বনের সব পশুপাখি সে দৃশ্য দেখে হাসাহাসি করতে লাগল। বাঘের ঘুম ভেঙে গেল। সে চোখ মেলে দেখে সবাই হাসছে। বাঁদর অমনি লাফিয়ে বাঘের পিঠ থেকে নেমে পালাতে লাগল। বাঘ তাকে ধরার জন্য পিছে পিছে ছুটতে লাগল।
বাঁদর বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে এল।
বাঘও লোকালয়ে এল তার পিছু পিছু। বাঁদর একটা সরকারি অফিসে ঢুকে পড়ল। দেখল, একটা অফিসারের টেবিল। কর্তা নেই। তাঁর চেয়ার ফাঁকা, চেয়ারে একটা কোট ঝুলছে, আর টেবিলে একটা পত্রিকা পড়ে আছে। বাঁদর চেয়ারে বসে পত্রিকাটা হাতে তুলে নিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল। বাঘটাও ততক্ষণে এসে পড়েছে সেই কক্ষে। সে বলল, ‘স্যার, এই ঘরে কি কোনো বাঁদর ঢুকেছে?’
পত্রিকার আড়াল থেকে বাঁদর গলার স্বর মোটা করে বলল, ‘কোন বাঁদর? যে বাঁদর একটা বাঘের কান টেনে তার সম্ভ্রমহানি ঘটিয়েছে?’
সর্বনাশ। এই খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে নাকি? বাঘ উল্টো দৌড় ধরে ফিরে এল তার বনে।
সংবাদপত্রে ছাপা হলে কোনো কাজ হয় না, তা ঠিক নয়। সংবাদমাধ্যমে মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কথা প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে বলেই তড়িঘড়ি করে মহাসড়কগুলোয় মেরামতের কাজ ঈদের আগেই শুরু করা হয়েছে। তাতে যোগাযোগ পরিস্থিতি এক মাস আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।
শুধু পুরোনো কৌতুক বললে আপনারা বলবেন, ঈদের আগে একটা নতুন কৌতুকও কি শোনানো যেত না। আচ্ছা, একেবারে ঝকঝকে তকতকে নতুন কৌতুক। একটা বাঘ যাচ্ছে পথ দিয়ে। দেখল, দুটো লোক পথের ধারে। একজন লোক পত্রিকা পড়ছে। আরেকজন লোক কম্পিউটারে লিখছে। বাঘটা যে লোকটা পত্রিকা পড়ছে, তাকে খেয়ে ফেলল। আর যে লোকটা লিখছে, তাকে কিছুই করল না।
কারণ কী? বাঘ বলল, ‘শোনেন নাই? রিডারস ডাইজেস্ট। পাঠককে খেলে হজম করা যায়। কিন্তু সাংবাদিক? বাঘে ছুঁলে এক ঘা, পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা আর সাংবাদিক ছুঁলে... আপনি সব হজম করতে পারবেন, কিন্তু সাংবাদিক হজম করতে পারবেন না।’
এবার আরেকটা পুরোনো কৌতুক। এক প্লেন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। সব যাত্রী, চালক, সেবক মারা গেছেন। শুধু একটা বাঁদর, যে ওই প্লেনে ছিল, বেঁচে আছে। তাকে মানুষের ভাষা শেখানো হলো। বাঁদর ইঙ্গিতে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। তদন্তকারী কর্তা বললেন, প্লেনটা যখন অ্যাক্সিডেন্ট করে তখন যাত্রীরা কী করছিল?
বাঁদর ইঙ্গিত করল, ঘুমোচ্ছিল।
‘বিমানসেবকেরা কী করছিলেন?’
বাঁদর ইঙ্গিত করল, ঘুমোচ্ছিল।
‘পাইলট কী করছিলেন?’
‘ঘুমোচ্ছিল।’
‘তাহলে তুই বাঁদর কী করছিলি?’
বাঁদর এবার ইঙ্গিত করল যেন সে বসছে ককপিটে এবং প্লেনটা চালাচ্ছে।
মানে বাঁদর প্লেন চালাচ্ছিল।
চালক ঘুমিয়ে পড়লে দুর্ঘটনা ঘটে।
অযোগ্য চালক প্লেন চালালেও দুর্ঘটনা ঘটে।
কবি নজরুল গেয়েছেন, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে, তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে’। চালকদের জাগিয়ে তোলার কাজটা তরুণদেরই নিতে হবে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘ওরে সবুজ ওরে আমার কাঁচা, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’। কচি-কাঁচারা চিৎ কার করলে কানে তুলো গুঁজেও কোনো লাভ হবে না।
ঈদ মোবারক। সবার ঈদের দিন ভালো কাটুক। প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বজনের সঙ্গে আনন্দে ঈদ করুন। যাঁরা বাড়ি গেছেন, তাঁরা নিরাপদে বাসায় ফিরে আসুন।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
ঈদের ছবিও প্রতিবছর একই। রমজান মানে দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। বাসে-ট্রেনে ভিড়। নীরব চাঁদাবাজি। ঈদের আগের পত্রিকায় ট্রেনের ছাদে আর লঞ্চের ছাদে মানুষের ভিড়ের ছবি থাকবেই। লঞ্চের ছবিটা বুড়িগঙ্গার ওপরের কোনো সেতু থেকে তোলা হবে। ট্রেনের ছবিটা টঙ্গীর কাছ থেকে তুললে ভালো আসবে। ঈদের সময় ঢাকার ফাঁকা হয়ে যাওয়া। ঈদের আগের খবর, ছুটির ফাঁদে বাংলাদেশ। ঈদের পরের ছবি হলো, সরকারি অফিসের সারি সারি ফাঁকা টেবিল-চেয়ার। এর মধ্যে অনিবার্য থাকবে কয়েকটা সড়ক দুর্ঘটনা।
তবে এবার ঈদে একটা নতুন ঘটনা আছে। এবার ঈদ নাকি জনপদে জনপদে অন্যবারের তুলনায় ভিন্ন রকমভাবে পালিত হচ্ছে। কারণ, কোনো মন্ত্রী-এমপি নাকি এই ঈদে এলাকায় যাচ্ছেন না। কারণ, তাঁদের মুখ দেখানোর জো নেই। এটা বিরাট খবর। তার মানে তাঁদের লজ্জা-শরম আছে।
ধন্যবাদ সৈয়দ আবুল হোসেন আর শাজাহান খানকে। তাঁরা এবার খবরে বৈচিত্র্য এনে দিয়েছেন। রমজান মাসে মহাসড়কে খানাখন্দক সৃষ্টি করার অপূর্ব সাফল্য এবার সংবাদমাধ্যমকে খবর পরিবেশনে ভিন্নতা দিয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
সরকার অবশ্য সমালোচনা পছন্দ করে না। কোনো সরকারই করে না। তারা মনে করে, সমালোচনা সংবাদমাধ্যম পরিকল্পিতভাবে করছে, এটা করা হচ্ছে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং এই সব সমালোচনার কোনো ভিত্তিই নেই। এটা যে শুধু আমাদের দেশে হয়, তা নয়, সব দেশেই হয়—কোনো দেশের সরকারই সংবাদমাধ্যমকে পছন্দ করে না।
ঈদের আগের গদ্যকার্টুনে কৌতুক পরিবেশন না করে এসব কী লিখছি? আমার কোনো নতুন কৌতুক মনে পড়ছে না। একটা পুরোনো কৌতুকই বলি। একটা বাঘ ঘুমিয়ে ছিল। একটা বাঁদর তাই না দেখে তার স্বভাবসুলভ বাঁদরামি শুরু করে দিল। সে ঘুমন্ত বাঘের পিঠে উঠে বাঘের দুই কান মলে দিতে লাগল। বনের সব পশুপাখি সে দৃশ্য দেখে হাসাহাসি করতে লাগল। বাঘের ঘুম ভেঙে গেল। সে চোখ মেলে দেখে সবাই হাসছে। বাঁদর অমনি লাফিয়ে বাঘের পিঠ থেকে নেমে পালাতে লাগল। বাঘ তাকে ধরার জন্য পিছে পিছে ছুটতে লাগল।
বাঁদর বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে এল।
বাঘও লোকালয়ে এল তার পিছু পিছু। বাঁদর একটা সরকারি অফিসে ঢুকে পড়ল। দেখল, একটা অফিসারের টেবিল। কর্তা নেই। তাঁর চেয়ার ফাঁকা, চেয়ারে একটা কোট ঝুলছে, আর টেবিলে একটা পত্রিকা পড়ে আছে। বাঁদর চেয়ারে বসে পত্রিকাটা হাতে তুলে নিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল। বাঘটাও ততক্ষণে এসে পড়েছে সেই কক্ষে। সে বলল, ‘স্যার, এই ঘরে কি কোনো বাঁদর ঢুকেছে?’
পত্রিকার আড়াল থেকে বাঁদর গলার স্বর মোটা করে বলল, ‘কোন বাঁদর? যে বাঁদর একটা বাঘের কান টেনে তার সম্ভ্রমহানি ঘটিয়েছে?’
সর্বনাশ। এই খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে নাকি? বাঘ উল্টো দৌড় ধরে ফিরে এল তার বনে।
সংবাদপত্রে ছাপা হলে কোনো কাজ হয় না, তা ঠিক নয়। সংবাদমাধ্যমে মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কথা প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে বলেই তড়িঘড়ি করে মহাসড়কগুলোয় মেরামতের কাজ ঈদের আগেই শুরু করা হয়েছে। তাতে যোগাযোগ পরিস্থিতি এক মাস আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।
শুধু পুরোনো কৌতুক বললে আপনারা বলবেন, ঈদের আগে একটা নতুন কৌতুকও কি শোনানো যেত না। আচ্ছা, একেবারে ঝকঝকে তকতকে নতুন কৌতুক। একটা বাঘ যাচ্ছে পথ দিয়ে। দেখল, দুটো লোক পথের ধারে। একজন লোক পত্রিকা পড়ছে। আরেকজন লোক কম্পিউটারে লিখছে। বাঘটা যে লোকটা পত্রিকা পড়ছে, তাকে খেয়ে ফেলল। আর যে লোকটা লিখছে, তাকে কিছুই করল না।
কারণ কী? বাঘ বলল, ‘শোনেন নাই? রিডারস ডাইজেস্ট। পাঠককে খেলে হজম করা যায়। কিন্তু সাংবাদিক? বাঘে ছুঁলে এক ঘা, পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা আর সাংবাদিক ছুঁলে... আপনি সব হজম করতে পারবেন, কিন্তু সাংবাদিক হজম করতে পারবেন না।’
এবার আরেকটা পুরোনো কৌতুক। এক প্লেন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। সব যাত্রী, চালক, সেবক মারা গেছেন। শুধু একটা বাঁদর, যে ওই প্লেনে ছিল, বেঁচে আছে। তাকে মানুষের ভাষা শেখানো হলো। বাঁদর ইঙ্গিতে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। তদন্তকারী কর্তা বললেন, প্লেনটা যখন অ্যাক্সিডেন্ট করে তখন যাত্রীরা কী করছিল?
বাঁদর ইঙ্গিত করল, ঘুমোচ্ছিল।
‘বিমানসেবকেরা কী করছিলেন?’
বাঁদর ইঙ্গিত করল, ঘুমোচ্ছিল।
‘পাইলট কী করছিলেন?’
‘ঘুমোচ্ছিল।’
‘তাহলে তুই বাঁদর কী করছিলি?’
বাঁদর এবার ইঙ্গিত করল যেন সে বসছে ককপিটে এবং প্লেনটা চালাচ্ছে।
মানে বাঁদর প্লেন চালাচ্ছিল।
চালক ঘুমিয়ে পড়লে দুর্ঘটনা ঘটে।
অযোগ্য চালক প্লেন চালালেও দুর্ঘটনা ঘটে।
কবি নজরুল গেয়েছেন, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে, তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে’। চালকদের জাগিয়ে তোলার কাজটা তরুণদেরই নিতে হবে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘ওরে সবুজ ওরে আমার কাঁচা, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’। কচি-কাঁচারা চিৎ কার করলে কানে তুলো গুঁজেও কোনো লাভ হবে না।
ঈদ মোবারক। সবার ঈদের দিন ভালো কাটুক। প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বজনের সঙ্গে আনন্দে ঈদ করুন। যাঁরা বাড়ি গেছেন, তাঁরা নিরাপদে বাসায় ফিরে আসুন।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।


এক ভদ্রলোক তার বাচ্চাটিকে নিয়ে পার্টিতে গেছেন। আড্ডায় আড্ডায় তিনি অনেকক্ষণ ধরেই মদ্যপান করছেন, হঠাৎ তার বাচ্চার কথা মনে হতেই পাশে তাকিয়ে দেখলেন তার বাচ্চাও খানিকটা মদ্যপান করে ফেলেছে। তিনি ঐ মদ্যপ অবস্থায় নিজেই গাড়ি চালিয়ে পার্টি থেকে বাসায় ফিরছেন আর একটু পর পর বাচ্চাকে বকছেন। হঠাৎ একজন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ তার গাড়ি থামিয়ে প্রশ্ন করছেন,
ট্রাফিক পুলিশঃ আপনার গাড়ি চালানো দেখে আমার সন্...দেহ হচ্ছে, আপনি নিশ্চয় মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছেন !
লোকটিঃ না, আমি মাতাল নই।
ট্রাফিক পুলিশঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি হা করুন আমার কাছে ডিটেক্টর মেশিন আছে আমি চেক করছি আপনি মাতাল কি-না?
লোকটি হা করলো এবং মেশিনে ”মাতাল"সিগনাল দিল।
ট্রাফিক পুলিশঃ মেশিন বলছে, আপনি মাতাল।
লোকটিঃ আপনার মেশিন নষ্ট।
ট্রাফিক পুলিশঃ অসম্ভব !
লোকটিঃ ঠিক আছে, আপনি আমার এই ছোট বাচ্চার মুখে মেশিনটি ধরুন, দেখি কি সিগনাল দেয়? এতটুকু বাচ্চাতো আর মদ পান করে না !
ট্রাফিক পুলিশঃ ঠিক আছে, বাবু মুখ হা করো তো...।
বাচ্চাটি মুখ হা করলো। এবং মেশিনে যথারীতি "মাতাল” সিগনালই দিল। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশটি লজ্জিত হয়ে বলল,
ট্রাফিক পুলিশঃ আপনার সময় নষ্ট করার জন্য স্যরি। অনেক দিন আগের মেশিন তো তাই মাঝে মধ্যেই ডিস্টার্ব দেয় !!!
ট্রাফিক পুলিশঃ আপনার গাড়ি চালানো দেখে আমার সন্...দেহ হচ্ছে, আপনি নিশ্চয় মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছেন !
লোকটিঃ না, আমি মাতাল নই।
ট্রাফিক পুলিশঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি হা করুন আমার কাছে ডিটেক্টর মেশিন আছে আমি চেক করছি আপনি মাতাল কি-না?
লোকটি হা করলো এবং মেশিনে ”মাতাল"সিগনাল দিল।
ট্রাফিক পুলিশঃ মেশিন বলছে, আপনি মাতাল।
লোকটিঃ আপনার মেশিন নষ্ট।
ট্রাফিক পুলিশঃ অসম্ভব !
লোকটিঃ ঠিক আছে, আপনি আমার এই ছোট বাচ্চার মুখে মেশিনটি ধরুন, দেখি কি সিগনাল দেয়? এতটুকু বাচ্চাতো আর মদ পান করে না !
ট্রাফিক পুলিশঃ ঠিক আছে, বাবু মুখ হা করো তো...।
বাচ্চাটি মুখ হা করলো। এবং মেশিনে যথারীতি "মাতাল” সিগনালই দিল। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশটি লজ্জিত হয়ে বলল,
ট্রাফিক পুলিশঃ আপনার সময় নষ্ট করার জন্য স্যরি। অনেক দিন আগের মেশিন তো তাই মাঝে মধ্যেই ডিস্টার্ব দেয় !!!
ভিক্ষুক:- স্যার..
আগে আপনি আমাকে প্রতিদিন
১০ টাকা দিতেন..
... তারপর প্রতিদিন ৫
টাকা দিতেন.. আর
আজ ক’দিন
হলো প্রতিদিন ১
টাকা দিচ্ছেন..
লোকটা :-
আগে আমি অবিবাহিত
ছিলাম.. তারপর আমার
বিয়ে হলো.. আর এখন
আমার
একটা বাচ্চা হয়েছে..
ভিক্ষুক:- ছিঃ .. আমার
পাওনা টাকায় সংসার
চালাচ্ছেন স্যার..
আগে আপনি আমাকে প্রতিদিন
১০ টাকা দিতেন..
... তারপর প্রতিদিন ৫
টাকা দিতেন.. আর
আজ ক’দিন
হলো প্রতিদিন ১
টাকা দিচ্ছেন..
লোকটা :-
আগে আমি অবিবাহিত
ছিলাম.. তারপর আমার
বিয়ে হলো.. আর এখন
আমার
একটা বাচ্চা হয়েছে..
ভিক্ষুক:- ছিঃ .. আমার
পাওনা টাকায় সংসার
চালাচ্ছেন স্যার..
-
2 no
রাতে গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন
এক ভদ্রলোক।
গাড়ি জ্যামে আটকে গেলে এক
ভিক্ষুক এসে হাত
... পাতল।
: দয়া করে কিছু দিন
স্যার !
: তুমি মদ খাও ?
: না স্যার।
: তুমি ধূমপান কর ?
: না।
: জুয়া খেল ?
: না।
: তুমি শিগগির আমার
গাড়িতে উঠ।
: যা দেবার এখানেই
দিন, স্যার।
: না,
তোমাকে বাড়ি নিয়ে আমার
স্ত্রীকে দেখাতেচাই
যে, মদ, জুয়া, ধূমপান এ
সবের
সাথে না থাকলে মানুষের
জীবনের কি ভয়াবহ
অবস্থা হয়।
Watch live streaming video from banglatvuk at livestream.comhttp://www.facebook.com/profile.php?id=727219182#!/profile.php?id=100000081143087 -